বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, বা WHO, স্তন্য্য দুগ্ধকে শিশুদের প্রাথমিক খাদ্য হিসেবে সুপারিশ করেছে কারণ এর অসংখ্য স্বাস্থ্যগত উপকারিতা যা শিশুর শারীরিক এবং মানসিক বিকাশে অপরিসীম ভূমিকা পালন করে। স্তন্য্য দুগ্ধ কেবলমাত্র শিশুর স্বাস্থ্যের উন্নতি করে না, এটি মায়ের স্বাস্থ্যেও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে।
প্রথমত, স্তন্যদুগ্ধের পুষ্টিগুণ অনস্বীকার্য। একটি শিশুর জীবনের প্রথম ছয় মাসে স্তন্যদুগ্ধকে সর্বাধিক আদর্শ খাদ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যা শিশুর পুষ্টির সমস্ত প্রয়োজন পূরণ করে। এতে মাতৃত্বের মন্থন থেকে সরাসরি প্রাপ্ত সমস্ত ভিটামিন, মিনারেল, প্রোটিন এবং ফ্যাট থাকে যা একটি শিশুর শরীরের জন্য প্রয়োজনীয়।
স্তন্য্য দানের মাধ্যমে শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। স্তন্যদুগ্ধে উপস্থিত জীবাণু প্রতিরোধী এজেন্টগুলি শিশুকে বিভিন্ন সংক্রমণ এবং রোগ-বালাই থেকে রক্ষা করে। বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গেছে যে স্তন্য্য দানের ফলে শিশুর হার্ট স্বাস্থ্য উন্নত হয় এবং তাদের স্নায়ু উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়।
আকস্মিক শিশুমৃত্যু রোধে স্তন্য্য দানের ভূমিকা অসীম। গবেষণা দেখায় যে, স্তন্য্য দান শিশুদের মধ্যে কিছু মারাত্মক অসুস্থতার ঝুঁকি কমায় এবং শিশুর ওজন নিয়ন্ত্রণ করে। এটি শিশুদের বৃদ্ধিতে সহায়ক হয় এবং তাদের মানসিক বিকাশে সাহায্য করে, যার ফলে তারা বুদ্ধিমান হয়ে ওঠে।
স্তন্যদুগ্ধ এবং শিশুর বুদ্ধিমত্তার মধ্যে রয়েছে প্রত্যক্ষ সম্পর্ক। স্তন্য্য দান শিশুদের মানসিক বিকাশ বৃদ্ধি করে এবং তাদের ভবিষ্যতের স্বাস্থ্যকর খাওয়ার অভ্যাস গঠনে সহায়তা করে। এর ফলে শিশুর সৃজনশীলতা এবং বুদ্ধির বিকাশ ত্বরান্বিত হয়।
মায়েদের জন্য স্তন্য্য দানের উপকারিতাও অসংখ্য। এটি প্রসবোত্তর বিষণ্নতা কমাতে সহায়ক এবং মায়ের জন্য প্রাকৃতিক জন্মনিয়ন্ত্রণ হিসেবে কাজ করে। স্তন্য্য দান মায়েদের স্তন ক্যান্সার এবং অন্যান্য কিছু স্বাস্থ্য ঝুঁকি হ্রাস করতে সহায়ক হতে পারে।
অর্থনৈতিক সুবিধার দিক থেকেও স্তন্য্য দান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি শিশু প্রাথমিক খাদ্যের জন্য অতিরিক্ত কোনো ব্যয় ছাড়াই সরবরাহ করে। এছাড়া, এটি পরিবেশবান্ধব, কারণ এটি শিশু খাদ্য উৎপাদনের পরিবেশগত প্রভাব হ্রাস করে।
স্তন্য্য দান শিশুর এবং মায়ের মধ্যে মানসিক বন্ধন গড়ে তুলে যা তাদের সম্পর্ককে আরো মজবুত করে। এটি কেবলমাত্র খাদ্য নয়, মায়ের উষ্ণতা, স্নেহ এবং স্নিগ্ধতা শিশুকে সান্ত্বনা প্রদান করে।
এখনকার এই বৈজ্ঞানিক সময়ে, স্তন্য্য দানের এতগুণ থাকা সত্ত্বেও অনেক মা বিকল্প হিসেবে ফর্মুলা দুধ ব্যবহার করছেন, যা শিশুদের জন্য কিছু ক্ষেত্রেই ক্ষতিকর হতে পারে। তাই WHO এর পরামর্শ অনুযায়ী, স্তন্য্য দানকে শিশুর আদর্শ খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করা উচিৎ যা মায়ের এবং শিশুর দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য উপকারিতা নিশ্চিত করে।